মম’তে মুগ্ধ…

জাকিয়া বারী মম, বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের এই সময়ের নির্ভরযোগ্য একজন অভিনেত্রী। যেকোনো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্মাতারা যার ওপর অনায়াসেই আস্থা রাখতে পারেন। নির্মাতাদের সেই আস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজেকে অভিনয়ে বিলিয়ে দিয়ে কাজ করেন। পূর্ণাঙ্গ এই অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যিনি অভিনয়জীবনের শুরুতেই পেয়ে যান, তার অভিনয় নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু থাকে না। কিন্তু যে সময়টাতে মম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন, সেই সময়টাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মূল্যায়নটা বুঝার মতো বয়স হয়নি তার। দিন যায়, সময় গড়িয়ে যখন নিজেকে পরিণত করলেন একজন পূর্ণাঙ্গ অভিনেত্রীতে, তখন তিনি এই পুরস্কারের মূল্যটা বুঝতে সক্ষম হলেন। আর তখনই যেন মম যতগুলো চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, সবগুলোতে নিজেকে আরো বেশি উজার করে দিয়ে অভিনয় করেছেন, যেন রাষ্ট্রের সেই পুরস্কারটি আবার তার হাতে আসে তারই সপ্রতিভ অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ। হয়তো এই প্রতীক্ষা শেষ হবে শিগগরিই নয়তো কেটে যাবে অনেকের মতো বছরের পর বছর। তবে এই নিয়ে আক্ষেপ নেই এই গুণী অভিনেত্রীর। পর্দার জীবন আর বাস্তবের জীবন দুই মিলিয়েই যেন ভীষণ ভালো আছেন জাকিয়া বারী মম। শুধু নির্মাতাদের কাছেই যে তিনি ভীষণ নির্ভরতার প্রতীক তাই নয়, সহশিল্পীদের কাছেও মম অতি প্রিয় একটি নাম। শুটিংয়ের সময় সহশিল্পীকে সবধরনের সহযোগিতা করার পাশাপাশি সিনিয়র, জুনিয়র শিল্পীদের খোঁজখবর রাখেন তিনি শুটিংয়ের বাইরেও। সহশিল্পীদের প্রায়শই বলতে শুনি, ‘মম অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা, অন্যরকম। মেয়েটার মনে অনেক মায়া।’ সত্যিই তাই। মম অন্য অনেক শিল্পীর চেয়ে আলাদা তার নিজের কিছু অন্যরকম ভালো বৈশিষ্ট্যের কারণে। প্রত্যেক শিল্পীরই একটা আলাদা ব্যক্তিজীবন আছে। মমও সেই ব্যক্তি জীবনে অনেক সুখী। মা, বাবা, ভাইকে নিয়ে তার সুখের পৃথিবী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর মেধাবী এই ছাত্রী চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারতেন। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি অদম্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধাই তাকে আজকের নন্দিত অভিনত্রীে মমতে রূপান্তরিত করেছে। মম বলেন, ‘কারো কেউ নই আমি, কিন্তু তারপরও প্রতিনিয়ত আমার কাজের জন্য দর্শকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পাই, এই ভালোবাসায় ধন্য আমি, পূর্ণ আমি। আমার নিজেকে নিয়ে যেতে চাই আমি আরো অনেকদূর। সে জন্য প্রতিনিয়ত আমি খুব শ্রম দিই। আমার প্রতিটি নাটকে, চলচ্চিত্রে নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করে নতুন এক মমতে রূপান্তর করতে চাই। আমি সবসময়ই আমার নির্মাতা, সহশিল্পীসহ সবার প্রতিই আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’ অভিনয়ে মমর সরব উপস্থিতি থাকলেও বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে নিয়মিত দেখা যায় না তাকে। সর্বশেষ লাক্সেরই দুটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাকে। তবে গত ৩ জুন থেকে দেশের প্রায় সবগুলো চ্যানেলে প্রচারিত হয়ে আসছে জাকিয়া বারী মমর নতুন একটি বিজ্ঞাপন। রাসেল শিকদার নির্দেশিত একটি বহুজাতিক পণ্য প্রতিষ্ঠানের গুঁড়া মসলার বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে তাকে দেখা যাচ্ছে তাকে। বিজ্ঞাপনটির প্রচারের প্রথমদিন থেকেই বিজ্ঞাপনে একজন মডেল হিসেবে প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য ফেসবুকে, মুঠোফোনে, সরাসরি দর্শকের কাছ থেকে এবং শুটিং লোকেশনে সহশিল্পীদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। নতুন এই বিজ্ঞাপনের অভূতপূর্ব সাড়ায় মুগ্ধ হচ্ছেন মম প্রতিদিনই। মম বলেন, ‘নতুন বিজ্ঞাপনটির জন্য এত সাড়া পাব আমি ভাবতেও পারিনি। যেখানে প্রতিদিন আমাকে স্বাভাবিকভাবে যতগুলো কল রিসিভ করতে হয় সেখানে এখন এর বহুগুণ কল রিসিভ করতে হচ্ছে এই বিজ্ঞাপনী প্রচারের পর থেকে। ফেসবুকে তো সাড়া পাচ্ছিই। শুটিং করছি যেখানে সেখানে সহশিল্পীরা অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। একটি বিজ্ঞাপনের জন্য এই যে সবার কাছ থেকে উত্সাহ, অনুপ্রেরণা পাচ্ছি এটা যে কতটা ভালোলাগার তা একদমই ভাষায় প্রকাশের নয়। আমি সত্যিই সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ দিতেই হয় নির্মাতা রাসেল শিকদারকে আমাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।’ মম আপাতত ঈদের নাটকের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘আলতাবানু’ চলচ্চিত্রে আলতা চরিত্রে মমর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। বলা যায় এই চলচ্চিত্রের গল্পের জার্নিটা মম একাই টেনে নিয়ে গেছেন। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। মম, বিদ্যা সিনহা মিম ও মেহজাবিন চৌধুরী সর্বশেষ অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপনে একসঙ্গে মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন।